টেকনাফ প্রতিনিধি ::
উপকূলের পড়–য়াদের সবুজ সুরক্ষার আহবানের মধ্যদিয়ে পূর্ব-উপকূলীয় জেলা কক্সবাজারের টেকনাফের সাবরাং উচ্চ বিদ্যালয়ে ‘সবুজ উপকূল ২০১৭’ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
কর্মসূচির আওতায় ছিল রচনা লিখন, পত্র লিখন, ছবি আঁকা ও সংবাদ লিখন প্রতিযোগিতা। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এছাড়াও ‘এসো সবুজের আহ্বানে, গড়ি সবুজ উপকূল’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং গাছের চারা রোপণ করা হয়। কর্মসূচিতে বিদ্যালয়ের একদল পড়–য়া পরিবেশ পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করে। বিদ্যালয়ে প্রকাশিত হয় দেয়াল পত্রিকা ‘বেলাভূমি’র বিশেষ সংখ্যা।
উপকূলের পড়–য়াদের মাঝে পরিবেশ সচেতনতা বাড়ানো, সৃজনশীল মেধার বিকাশ, লেখালেখি চর্চার মাধ্যমে তথ্যে প্রবেশাধিকারসহ জীবন দক্ষতা বাড়ানো এই কর্মসূচির অন্যতম লক্ষ্য। ব্যতিক্রমধর্মী পরিবেশ সচেতনতামূলক এ কর্মসূচি এবার তৃতীয় বছরে পা রাখলো। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় এই কর্মসূচির আয়োজন করে উপকূল বিষয়ক সৃজনশীল প্রতিষ্ঠান ‘উপকূল বাংলাদেশ’।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নূর হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবরাং উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য জহিরুদ্দিন আহমেদ, স্কুলের পিটিএ কমিটির সভাপতি মোস্তাক আহমেদ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক হ্নীলা শাখার ব্যবস্থাপক মো. হারুন আর রশিদ ও ব্যাংকের কর্মকর্তা মো. ফখরুদ্দিন প্রমূখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভেন্যু বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মফিজ-উদ-দৌল্লাহ।
আলোচনা সভায় বক্তারা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, শুধু পাঠ্য বইয়ের পড়া মুখস্ত করে পরিক্ষায় ভালো ফলাফল করলেই চলবে না। এর পাশাপাশি চারপাশের জগত সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করতে হবে। পরিবেশ সুরক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। উপকূলের প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। ভালো ফলাফলের সঙ্গে সাধারণ জ্ঞানের সংমিশ্রনই পারে মানুষের মত মানুুষ করে তুলতে। তোমাদেরকে ভালো মানুষ হয়ে প্রদীপের মত আলো জ¦ালাতে হবে, যাতে তোমার আলোতে আরও অনেকজন আলোকিত হতে পারে।
অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন সবুজ উপকূল ২০১৭ কর্মসূচির স্থানীয় সংগঠক ও দৈনিক কক্সবাজারের টেকনাফ সংবাদদাতা জসিম মাহমুদ। কর্মসূচির প্রেক্ষাপট ও উপকূলের সার্বিক অবস্থা নিয়ে কথা বলেন, সবুজ উপকূল ২০১৭ কর্মসূচির কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী ও আয়োজক প্রতিষ্ঠান উপকূল বাংলাদেশ-এর পরিচালক রফিকুল ইসলাম মন্টু। অনুষ্ঠানের শুরুতে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য তুলে ধরে সাবরাং উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মো. ফাহাদ। অনুষ্ঠান সূচনা ও উপস্থাপনায় ছিল বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ফারহান আজাদ ও নবম শ্রেণীর জয়দুন বাহার জয়নব।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বিভিন্ন সৃজনশীল প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। তিনি বিদ্যালয় প্রধানের কাছে গাছের চারা হস্তান্তর করেন এবং পরে চারা রোপণের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের চারপাশে সবুজায়ন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহনে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্যদিয়ে কর্মসূচির সূচনা ঘটে।
এবারের কর্মসূচিতে সহ-আয়োজক হিসাবে রয়েছে উপকূলের স্কুল পড়–য়াদের সংগঠণ আলোকযাত্রা দল, মিডিয়া পার্টনার হিসাবে রয়েছে এটিএন বাংলা ও দৈনিক সমকাল এবং আইটি পার্টনার হিসাবে রয়েছে ডটসিলিকন।
এবার উপকূলের ১৪টি জেলার ১৯টি উপজেলার ২০টি স্থানে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হবে। কর্মসূচিতে ১০০ স্কুলের প্রায় ৭০ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেবে। এ নিয়ে তিন বছরে উপকূলের ২৫৬টি স্কুলে ১ লাখ ৭০ হাজার শিক্ষার্থী সবুজ উপকূল কর্মসূচির আওতায় আসছে। স্কুল শিক্ষার্থীরা পেয়েছে পরিবেশ সচেতনতার বার্তা, যা তাদের প্রাত্যহিক জীবনে কাজে লাগছে।
এবার সাতক্ষীরার শ্যানগরের মুন্সীগঞ্জ, গাবুরা, খুলনার পাইকগাছা, বাগেরহাটের সদর ও শরণখোলা, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া, ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া, বরগুনার তালতলী, পটুয়াখালীর কুয়াকাটা ও চরমোন্তাজ, ভোলার চরফ্যাসন ও তজুমদ্দিন, চাঁদপুরের হাইমচর, লক্ষ্মীপুরের কমলনগর, নোয়াখালীর সুবর্ণচর ও হাতিয়া, ফেনীর সোনাগাজী, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ এবং কক্সবাজারের টেকনাফ ও মহেশখালীতে কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
২০১৫ সাল থেকে সবুজ উপকূল কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। ২০১৫ সালে ১০টি জেলার ১৩টি উপজেলার ৪০টি স্কুলের প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী এই কর্মসূচিতে যুক্ত হয়। পরের বছর ২০১৬ সালে ১৪টি জেলার ২৫টি উপজেলার ১১৬টি স্কুলের প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষার্থীকে এ কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে। এবারের কর্মসূচি নিয়ে তিন বছরে উপকূলের ২৫৬টি স্কুলে ১ লাখ ৭০ হাজার শিক্ষার্থী সবুজ উপকূল কর্মসূচির আওতায় আসছে।
পাঠকের মতামত: